ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায়

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি জানতে চান যে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় ও ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এই সম্পর্কে? তাহলে আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ এই আর্টিকেলে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এবং ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ফৌজদারী-কার্যবিধি-১৪৪-ধারা-একই-জমি-নিয়ে-কত-বার-মামলা-করা-যায়-১৪৪-ধারা-মামলা-কি-১৪৪-ধারার-নিয়ম-১৪৪-ধারা-জারি-করেন-কে-কত-তারিখে-১৪৪-ধারা-জারি-করা-হয়-জমির-উপর-১৪৪-ধারা-জারি-১৪৪-ও-১৪৫-ধারার-পার্থক্য-১৪৪-ধারা-সর্বাধিক-পরিচিত-কোন-আইনে
 
এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় ও ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এসব বিষয় বিস্তারিত জানতে পারবেন। দেরি না করে এখনি জেনে নিন এসব বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত।
 

১৪৪ ধারা মামলা কি

Criminal Procedure Code (CrPC) বা ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড কে বাংলায় ফৌজদারী কার্যবিধি বলা হয়। এটি মূলত Procedural Law বা পদ্ধতিগত আইন। ফৌজদারি মামলা দায়ের করা থেকে শুরু করে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত সমস্ত পদ্ধতির কথা উল্লেখ রয়েছে এই কার্যবিধিতে। অর্থাৎ মামলা পরিচালনা করার গাইড বুক হচ্ছে ফৌজদারী কার্যবিধি।
 
এছাড়া অপরাধ কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে সে সম্পর্কে বেশ কিছু প্রতিরোধের মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে এই কার্যবিধিতে। অর্থাৎ যেকোনো সমস্যা হলে এই কোড থেকে তথ্য নিয়ে সমাধান করা যাবে। এই তথ্যগুলো কোডটির ১০৬ থেকে ১৫৩ ধারায় বর্ণিত আছে, আর তার মধ্যে ১৪৪ ধারা অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এই ১৪৪ ধারা মানে এটি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের একটি অপরাধ প্রতিরোধমূলক ধারা। আর যদি কোন ব্যক্তি এই ১৪৪ ধারার আইন ভঙ্গ করে তাহলে তাকে ১৪৪ ধারা মামলা দেওয়া হয়।

১৪৪ ধারার নিয়ম

১৪৪ ধারার শিরোনাম হচ্ছে গণ উপদ্রব্য বিপদ আশঙ্কার জরুরী ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ কার্যকরযোগ্য আদেশ ইস্যুর ক্ষমতা, যাকে ইংরেজিতে Power to issue order absolute at once in urgent cases of nuisance or apprehended danger বলা হয়। অর্থাৎ যেখানে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মারামারি বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হতে পারে এবং কারো জীবন বিপন্ন হতে পারে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তৎক্ষণাৎ কার্যকারযোগ্য আইন জারি করার কথা বলা হয়েছে ১৪৪ ধারায়।
 
১৪৪ ধারা জারি করেন কেফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা আইনে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উপযুক্ত ক্ষেত্রে লিখিতভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ২ মাসের জন্য কোন কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন কিংবা জনসাধারণকে কোন স্থানে একসাথে হওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে পারেন।
 
তবে কোন ব্যক্তির উপরে ১৪৪ ধারা জারি করার পূর্বে ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত ব্যক্তিকে নোটিশ দিয়ে তার বক্তব্য শোনার ক্ষমতা রাখেন। তবে বক্তব্য শোনার মত যদি সময় বা পরিস্থিতি না থাকে তাহলে সরাসরি তার নামে ১৪৪ ধারা আইন জারি করা হয়। তবে ওই ব্যক্তি যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে নিজ উদ্যোগে ক্ষমা করতে পারবেন কিংবা আদেশ পরিবর্তন করতে পারবেন।
 
তবে ম্যাজিস্ট্রেট যদি ১৪৪ ধারা জারি করার পরে তা বাতিল কিংবা পরিবর্তন না করেন তাহলে এই আইনটি ওই ব্যক্তির উপরে দুই মাস ধরে কার্যকর থাকে। দুই মাস পরে ওই ব্যক্তির উপর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনটি অকার্যকর হয়ে যায়। তবে সরকারের প্রয়োজন অনুসারে এই সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেন। তবে মনে রাখবেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৪৪ ধারা আইন জারি করা যায় না।

কত তারিখে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়

১৪৪ ধারা ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে জারি করা হয়েছিল।

১৪৪ ধারা সর্বাধিক পরিচিত কোন আইনে

১৪৪ ধারা বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে সর্বাধিক পরিচিত।

জমির উপর ১৪৪ ধারা জারি

গ্রামে জমি-জায়গা নিয়ে অনেক ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, দাঙ্গা হাঙ্গামা দেখা যায়। আপনার বৈধ সম্পত্তিতে যদি কোন একটি অবৈধভাবে দখল করতে চায় তখন আপনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপনার জমির উপরে ১৪৪ ধারা আইন জারি করার আবেদন করতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে যদি আপনার কোন ত্রুটি না পায় তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট লিখিতভাবে ওই জমির উপর লিখিতভাবে ১৪৪ ধারা আইন জারি করেন।
 
এই আইন জারি করার কারণে আপনার জমির উপরে চার জনের বেশি মানুষ একসাথে থাকতে পারবে না। যদি এক জায়গায় ৪ জনের বেশি মানুষ একসাথে জমায়িত হয় তাহলে তারা সবাই ১৪৪ ধারা আইন লঙ্ঘনের অপরাধে জড়িয়ে পড়বেন। এই আইন লঙ্ঘনের কারণে তাদের উপযুক্ত শাস্তি উপভোগ করতে হতে পারে।
 
তবে জমি জায়গা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে আপনার এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবেন। কারণ এসব বিষয় নিয়ে মামলা করলে পরবর্তীতে মামলা বিষয়ে অনেক খরচ হয় এবং প্রতিপক্ষদের সাথে সারাজীবন বিরোধ থাকে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার নিকটস্থ মেম্বার ও চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে আপনার প্রতিপক্ষের সাথে জমি বিষয়ে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা।

১৪৪ ও ১৪৫ ধারার পার্থক্য

১৪৪ ও ১৪৫ ধারা ফৌজদারী কার্যবিধির অপরাধ প্রতিরোধমূলক ধারা। এই ধারা দুটি মোটামুটি একই তবে এদের প্রয়োগের সামান্য পার্থক্য রয়েছে। ১৪৪ ধারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় প্রয়োগ করা যায় অন্যদিকে ১৪৫ ধারা যেকোন সময় যেকোন স্থানে প্রয়োগ করা যায়। ১৪৪ ধারা মূলত জনগণের সুরক্ষার জন্য অধিক পরিচিত অন্যদিকে ১৪৫ ধারা জমি জায়গার বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে তার সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োগ করা হয়।
 
১৪৪ ও ১৪৫ ধারার মূল পার্থক্য হচ্ছে সময়ে অর্থাৎ ১৪৪ ধারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রযোজ্য হয় অন্যদিকে ১৪৫ ধারা স্থায়ীভাবে কার্যকর হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ১৪৪ ও ১৪৫ ধারার পার্থক্য। তবে এই দুইটির উদ্দেশ্য মূলত একই অর্থাৎ অপরাধ নির্মূল এবং জনগণের শান্তিরক্ষায় এসব ধারার মূল লক্ষ্য।

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায়

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় আপনি যেহেতু এই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি হয়তো জমি জায়গা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। তবে এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, কারণ আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এবং এর নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
 
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে একবার মামলা করা যায় তবে, ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা অনুসারে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথমত, পূর্ববর্তী মামলাটি নিষ্পত্তি হতে হবে। এর অর্থ হলো মামলাটি আদালতের মাধ্যমে সমাধান হতে হবে, অথবা মামলাটি প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নতুন মামলার কারণ পূর্ববর্তী মামলার কারণ থেকে ভিন্ন হতে হবে। যদি একই কারণে বারবার মামলা করা হয়, তাহলে আদালত নতুন মামলাটি খারিজ করে দিতে পারে।
ফৌজদারী-কার্যবিধি-১৪৪-ধারা-একই-জমি-নিয়ে-কত-বার-মামলা-করা-যায়-আইনজীবীর-থেকে-জানুন-২
তৃতীয়ত, নতুন মামলায় নতুন প্রমাণ থাকতে হবে। পূর্ববর্তী মামলায় উপস্থাপিত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নতুন মামলা করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, একই জমির দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এক পক্ষ ১৪৪ ধারার অধীনে মামলা করে। আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে এবং জমি দখলের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়।
 
কিন্তু, নির্দেশ দেওয়ার পরও দখলকারী পক্ষ জমি ছেড়ে দেয় না। এই ক্ষেত্রে, ভুক্তভোগী পক্ষ আবারও ১৪৪ ধারার অধীনে মামলা করতে পারবে। কারণ, পূর্ববর্তী মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং নতুন মামলার কারণ (জমি ছেড়ে না দেওয়া) পূর্ববর্তী মামলার কারণ (জমির দখল) থেকে ভিন্ন। তবে, মনে রাখতে হবে যে, বারবার ১৪৪ ধারার অধীনে মামলা করা আদালতের অবমাননা হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে বারবার মামলা করা উচিত নয়।
 
তাই একই বিষয়ে বারবার মামলা না করে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা উচিত। আপনি যদি একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ গ্রহণের উদ্দেশ্যে আপনার সমস্যা উপস্থাপন করেন তাহলে তিনি আপনাকে অবশ্যই একটি সঠিক পরামর্শ প্রদান করবেন। তাই আপনার যদি এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকে তাহলে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন। আশা করি জানতে পেরেছেন ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায়।

১৪৪ ধারা ভঙ্গের শাস্তি কি

কোন ম্যাজিস্ট্রেট যদি ১৪৪ ধারা জারি করে আর কোন ব্যক্তি যদি এই ১৪৪ ধারা জারি কৃত আইন লঙ্ঘন করে তাহলে ২ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এমনকি উভয় দণ্ডও হতে পারে।
১৪৪-ধারা-ভঙ্গের-শাস্তি-কি-দেখে-নিন-১

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায়

যেহেতু আপনি জেনেছেন যে, ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় তাহলে আপনাকে বোঝানোর সহজ হবে। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুসারে একই জমি নিয়ে একাধিকবার মামলা করা যায়। ১৪৪ ধারা অনুসারে যেমন মাত্র একবারই মামলা করা যায় কিন্তু ১৪৫ ধারায় এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এখানেও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে যে শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করার পরেই আপনি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুসারে মামলা করতে পারবেন।
 
আপনি যদি তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারেন তাহলে এই ধারায় মামলা করতে পারবেন। শর্ত তিনটি হচ্ছে পূর্ববর্তী মামলার ফলাফল, দখলের বর্তমান অবস্থা এবং নতুন দাবি। এই সবগুলো যদি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে আপনি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুসারে একই জমি নিয়ে বারবার মামলা করতে পারবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায়।

ব্যক্তিগত মতামত

আজকের এই আর্টিকেলে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা একই জমি নিয়ে কত বার মামলা করা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে তাহলে আর্টিকেলটি অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর জমিজমা সংক্রান্ত যেকোন বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − twelve =